ইসলাম

ইসলামের দৃষ্টিতে আত্বিয়দের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে আমাদের করনিয়ঃ

ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন ও সুসম্পর্ক বজায় রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। এটি ইসলামে অত্যন্ত প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে এবং এটি "সিলাতুর রাহিম" (আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা) নামে পরিচিত। ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে আত্মীয়দের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে কয়েকটি মূলনীতি রয়েছে:

১. ভাল ব্যবহার ও দয়া প্রদর্শন:

ইসলামে আত্মীয়দের সাথে সদাচারণের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। কুরআনে আল্লাহ বলেন,
“আর আত্মীয়-স্বজনকে তার প্রাপ্য দান করো এবং মিসকিন ও পথিককেও” (সুরা আল-ইসরা, ১৭:২৬)।
আত্মীয়দের সাথে সদয় আচরণ করা এবং তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা।

২. আত্মীয়দের সাহায্য করা ও সহায়তা প্রদান করা:

কোন আত্মীয় সমস্যায় পড়লে তাকে সাহায্য করা এবং তার প্রয়োজনে সাড়া দেওয়া ইসলামের অন্যতম কর্তব্য।
হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি তার আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না” (মুসলিম, ২৫৫৬)।

৩. অপরাধ বা অন্যায়ের পরেও সম্পর্ক বজায় রাখা:

ইসলামে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে যে, আত্মীয় যদি অন্যায় করেও থাকে, তবুও তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা উচিত নয়। তাদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখা এবং মাফ করা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
হাদিসে বলা হয়েছে, “আসল সম্পর্ক রক্ষা করা হল, যখন আত্মীয়তা ছিন্ন করতে চায়, তখনও তাকে জুড়ে রাখা” (বুখারি, ৫৯৯১)।

৪. আত্মীয়দের জন্য দোয়া করা:

আত্মীয়দের মঙ্গল কামনা করে আল্লাহর কাছে দোয়া করা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। এটি সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করে।

৫. সালাম ও সাক্ষাৎ বিনিময়:

আত্মীয়দের সাথে দেখা করা এবং সালাম বিনিময় করা সম্পর্ককে মজবুত করে। সামান্য খোঁজ খবর নেওয়াও অনেক বড় সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যম হতে পারে।

৬. ঈদ ও অন্যান্য আনন্দের সময় তাদের সাথে মিলিত হওয়া:

ঈদ, বিবাহ বা অন্যান্য খুশির সময়ে আত্মীয়দের আমন্ত্রণ জানানো এবং তাদের সাথে সময় কাটানো সুসম্পর্ক বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

ইসলামে আত্মীয়তার বন্ধনকে রক্ষা করা এবং সুসম্পর্ক বজায় রাখা শুধু পৃথিবীতে নয়, আখিরাতের জন্যও উপকারী বলে বর্ণিত হয়েছে।





ইসলামের দৃষ্টিতে সমাজ ব্যবস্থা

 ইসলামের দৃষ্টিতে সমাজ ব্যবস্থা এমন হওয়া উচিত যা ন্যায়বিচার, সমতা, এবং শান্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। এটি মানুষের মধ্যে ভালোবাসা, সহমর্মিতা, এবং পারস্পরিক সহযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি করে। ইসলামী সমাজ ব্যবস্থার মূল বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপঃ

১. ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা

ইসলামে সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে:
"নিশ্চয়ই আল্লাহ ন্যায়বিচার করতে এবং আত্মীয়দের প্রতি সদাচরণ করতে আদেশ দেন।" (সুরা আন-নাহল, আয়াত ৯০)
ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য প্রত্যেক ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষিত করতে হবে, এবং কোনো প্রকার পক্ষপাতিত্ব বা অন্যায় আচরণ সহ্য করা যাবে না।

২. সমতা ও ভ্রাতৃত্ব

ইসলামে সবাইকে সমান মর্যাদা দেওয়া হয়েছে, জাতি, বর্ণ বা অবস্থানের ভিত্তিতে কোনো বৈষম্য করা হয় না। পবিত্র হাদিসে নবী (সা.) বলেছেন:
"আরবের উপর অনারবের এবং অনারবের উপর আরবের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই; শ্রেষ্ঠত্ব কেবল তাকওয়ার ভিত্তিতে।"

৩. পরস্পরের অধিকার সংরক্ষণ

সমাজে প্রত্যেকের অধিকার রয়েছে। যেমন:

  • প্রতিবেশীর অধিকার
  • গরীব ও মিসকিনের অধিকার
  • এতিমের অধিকার
    কুরআন ও হাদিসে বারবার এ বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।

৪. শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ

ইসলামী সমাজে প্রত্যেক ব্যক্তি তার জীবন, সম্পদ এবং সম্মানের ব্যাপারে নিরাপত্তা পাবে। নবী (সা.) বলেছেন:
"একজন মুসলিম তার জিহ্বা এবং হাত দ্বারা অন্য মুসলিমের ক্ষতি করবে না।"

৫. নৈতিকতা ও উত্তম চরিত্র গঠন

ইসলামী সমাজ ব্যবস্থায় প্রত্যেক ব্যক্তি সত্যবাদিতা, ধৈর্য, সহমর্মিতা, এবং নম্রতা রক্ষা করবে। মিথ্যা, প্রতারণা, এবং অন্যায়ের কোনো স্থান নেই।

৬. পারস্পরিক সহযোগিতা

কুরআনে বলা হয়েছে:
"সৎকর্ম ও তাকওয়ার বিষয়ে তোমরা একে অপরকে সাহায্য কর, কিন্তু পাপ ও অন্যায়ের ক্ষেত্রে একে অপরকে সাহায্য করো না।" (সুরা মায়েদা, আয়াত ২)

৭. উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড

ইসলামে সমাজের উন্নয়নের জন্য জ্ঞান অর্জন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

ইসলামের আদর্শ অনুযায়ী একটি সমাজ নৈতিক, মানবিক ও আধ্যাত্মিক মানদণ্ডের ওপর গড়ে উঠবে, যা সবাইকে সুখী ও সফল জীবনযাপন করতে সহায়তা করবে।






No comments:

Post a Comment

Parts of speech

Parts of speech is fundamental to effective language and communication: Clarity and Precision: Parts of speech provide the structural fram...